.............তুমি কোথায়?

মুক্তিযোদ্ধা (ডিসেম্বর ২০১২)

ইমরান আলম
  • ৫৮

রাখির মন খুবই খারাপ .প্রায় এক ঘন্টা একা একা পার্কে বসে থাকার পর আসলাম আসলো . এসেই বসে পড়ল .এরপর তার সেই বোকা জাতীয় একটি হাসি .যে হাসির অর্থ হয় -"কাউকে এক ঘন্টা বসিয়ে রাখা কোনো ঘটনাই না.'
রাখি চোখ-মুখ শক্ত করে বলতে চাইল -"এত দেরি করলে কেন?" কিন্তু সে তা বলল না . সে অভিমান ভরে বলে উঠলো-
---তুমি এখানে বসে থাকো . বসে বসে হওয়া খাও .আমি যাই .
রাখি উঠে পড়ল .রাখি জানে সে তাকে পিছু ডাকবে না . তার অভিমান ভাঙ্গানোর চেষ্টা করবে না .সে শুধুই হাসবে . যে হাসির অর্থ রাখি এখন আর বোঝে না . কিন্তু এক সময় বুঝতো .এক সময় তার মনে হত -এই হাসিটা হচ্ছে ভালবাসার হাসি .এটা হচ্ছে অভিমানের হাসি ,আর এটা হচ্ছে রাগের হাসি .কিন্তু এখন তার কাছে সব হাসি-ই রহস্যময়ী হাসি মনে হয় .
রাখির এতদিন ধারণা ছিল -মানুষের ক্ষেত্র বিশেষে কিছুটা পরিবর্তন হয় .কিন্তু সে পুরো-পুরি'ই পরিবর্তন হয়েছে .যেমন এক সময় সে খুবই মিষ্টি সুরে 'বউ কথা কও' জাতীয় কথা বলত .কিন্তু এখন আর বলে না . রাগ করলে -'নোটন নোটন পায়রাগুলি ,ঝোটন বেধেছে ...'জাতীয় কবিতা আবৃতি করে হাসাত .এখন আর হাসায় না .এখন সে শুধু নিজেই হাসে . যেমন তাকে যদি প্রশ্ন করা হয় -'তুমি কেমন আছ?" তাতেও হাসি . মনে হয় কেমন থাকা না থাকা টা কোনো প্রশ্নের পর্যায়ে পরে না . অথচ এই প্রশ্নটি অন্য কেউ একজন করলে তার সাথে খুবই মধুর সুরে কথা বলে .তার সাথেই শুধু এরকম .আচ্ছা কি চায় সে?সে কি চায় সম্পর্ক ব্রেক-আপ করার ? রাখির চোখে জল ছল-ছল করছে . সে ভাবছে -কি আশ্চর্য ;এখানে আবার জল আসার মত কোনো ব্যাপার হলো ;তার পরও জল গড়িয়ে পড়ছে .বাধ মানছে না .রাখি এক সময় অনুভব করলো -সে আবার ফুপিয়ে –ফুপিয়ে কাঁদছেও . রাস্তার লোকজনও তাকে দেখছে .কেমন একটা দুক্ষ দুক্ষ ভাব নিয়ে .
আসলামের মোবাইল বেজে উঠলো .কিচির-মিচির শব্দ করে . সাধারণত কিচির-মিচির রিংটোন-এ যে কল গুলো আসে .সেগুলো খুবই ব্যক্তিগত কিছু কল .আর এসব কলগুলো প্রথমবারে কখনো ধরা হয় না. দ্বিতীয়বারেও না .তৃতীয়বারে কলগুলো রিসিভ করা হয় .আর এই কলগুলো পরপর কখনো আসে না .পাঁচ মিনিটের মধ্যে এই কলগুলো আসে .
আসলাম অপেক্ষা করছে তৃতীয় কলটির জন্য .এবার ফোনটি তৃতীয়বারের মত কিচির-মিচির করে উঠলো .আসলাম কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠলো -
---আসালামুয়ালায়কুম ভাইয়া .
---ওয়ালায়কুম্মুস্সালাম .
---আপনি এখন কোথায় ভাইয়া ?
---পার্কে .হাওয়া খেয়ে বেড়াচ্ছি .
---আচ্ছা আপনি প্রাণ খুলে হাওয়া খান . যেটা নিয়ে আপনার চিন্তা ছিল .সেটা নিয়ে আর কোনো চিন্তা নেই .
---মানে ?
---আজ রাতেই অপারেশন হতে যাচ্ছে .সব কিছুই ঠিক-ঠাক .সময় মত আপনাকে ফোন করা হবে ..আপনি চলে আসবেন .
---বল কি ?সব-কিছু ঠিক-ঠাক আছে তো? ব্যাটা কিন্তু খুবই বিপদজনক .বিষধর সাপ একটা .
---বিষধর সাপ ঠিকই .কিন্তু বিষ দাঁত আর নাই .এখন কামড়ালে বিষ লাগবে না .শির-শির করবে . হা-হা-হা....
---আচ্ছা রাখো .আমি সময় মত চলে আসবো .
আসলাম মুচকি একটা হাসি দিল . তৃপ্তির হাসি . তৃপ্তির হাসি হেসেও তার মনটা খারাপ হয়ে গেল .রাখি চলে গেছে বলে .তাকে বাধা দেওয়া উচিত ছিল .কিন্তু দেওয়া হয় নি .আচ্ছা ফোন করে সরি বললে কেমন হয় ? অনেক দিন ধরেই তো সরি জাতীয় কিছু বলা হয় না .ওর মনে এত কষ্ট দিয়েও .
আসলাম ডাইল কলে রাখি নামটি চাপলো .কিন্তু ওপাশ থেকে যে কথাগুলো ভেসে আসলো .তাতে আর সরি বলা হলো না . রাখি ফোন বন্ধ করে রেখেছে .


-----------##########----#########------############
---এই ছেলেরা, তোমরা কি চাও ?আমাকে এভাবে ধরে এনেছ কেন ?
---রসের আলাপ করার জন্য . চিল্লা-চিল্লি না করে চুপ থাকেন .মুরুব্বি মুরুব্বির থাকেন .
---দেখো .ভালো হবে না বলছি . তোমরা আমার এলাকার ছেলে .আমার সমন্ধে তোমরা ভালো করেই জানো . আমি কে ?এবং কি ?
---হু -খুব ভালো জানি .আপনি হচ্ছেন টাইগার পার্টির সাবেক এম পি .মোহাম্মদ খোরশেদ খান .পাবলিক আপনাকে খরগোস খান বলে ডাকে .হা-হা-হা....
---দেখো ফাজলাম করবে না .ফাজলামির কিন্তু একটা সীমা আছে ?
---মুরুব্বি বেশি কথা বলে .এই লিখন .এক টানে মুরুব্বির পনেরটা চুল ছের তো? ব্যথা পেয়ে উহ: না করলে আরো পনেরোটা .
লিখন এম. পি. সাহেবের মাথার কাছে এগিয়ে গেল . এম. পি. সাহেবের মাথার চুল ধরতে যাবে -ঠিক এসময় আসলামকে আসতে দেখে হাত সরিয়ে নিল .আসলাম এম.পি. সাহেবের সামনে এসেই বলল---
---অস্সালামুয়ালায়কুম সাবেক এম.পি. সাহেব .
এম .পি. সাহেব মুখ গম্ভীর করে বলে উঠলেন----
---আমাকে সাহেব বলার কোনো দরকার নাই .নাম ধরে বলো. বন্দিদের সাহেব ডাকলে খুবই হাস্যকর লাগে .
জৈনক একজন বলে উঠলো ---
---আপনি তো দেখছি অভদ্রের শিরোমনি .আসলাম ভাই আপনাকে সালাম দিল .আপনি উত্তর দিলেন না. আপনার কি বাচ্চা কাটা হয়েছে .
---মানে ?
---মানে মুসলমানি হয়েছে না হয়নি ?
---দেখো ,আমি একজন সাবেক সংসদ সদস্য .আমার সাথে ভদ্রভাবে কথা বলো .তাছাড়া তোমাদের মত বখাটে ছেলেদের কাছ থেকে আমাকে সালাম-কালাম শিখতে হবে না .কি জন্য ধরে এনেছ সেটা বলো .
---আসলাম ভাই ওর মুখে একটা ঘুসি দেব ?ঘুসি দিয়ে ওর মুখটা ভোতা করে দেই .কথা বন্ধ হবে .
---না . ইনি হচ্ছেন দুর্নিতিবান মুরুব্বি মানুষ .এনাকে কিছুটা সময় দেওয়া দরকার . এম .পি .সাহেব এই নিন .ফাইল গুলো দেখেন .
---কিসের ফাইল ?
---গত দুই বছরে যে দুর্নীতি করেছেন, তার ফাইল .
---হু ,তোমাদের ভাব দেখে মনে হচ্ছে ,তোমরা দুর্নীতি -দমনের কমিশন খুলে বসেছ .দেশে আইন -আদালত কি সব উঠে গেছে নাকি?
---না , কিছুই উঠে নি .যেটা উঠেছে ,সেটা হচ্ছে সততা .আপনাদের মধ্যে থেকে সততা উঠে গেছে .
---বক্তিতা ভালই শিখেছ .নির্বাচন করতে চাও .কাজে লাগবে .কিন্তু ভুল কর না .
---ভুল .হা-হা-হা...আমরা ভুল থেকেই শুরু করতে চাই .এই যে আপনি ?আপনি কিন্তু একজন ভুল মানুষ.আচ্ছা আপনি আপনার সমন্ধে কি মনে করেন ?আপনি কি একজন ভুল মানুষ নন ?
---আমি নিজেকে কিছুই মনে করি না . nothing .
---কিন্তু সাধারণ জনগণ অনেক কিছুই মনে করে .তারা মনে করে আপনি রীতিমত একজন ভুল মানুষ .
---কে কি মনে করলো এটা আমার দেখার বিষয় না.
---তা ঠিক .ভুল মানুষেরা এটা কখনো দেখে না .আচ্ছা ফাইল গুলো কি আপনি এখন দেখতে চাচ্ছেন না ?
---না .
---ফাইল-এ কি আছে জানতে চান না .
---না .
---না চাইলেও জেনে নিন .উপর থেকে প্রথম তিন ফাইলের নিচে যে ফাইলগুলো আছে ?সে সব গুলোই আপনার দুর্নীতির হিসাব-নিকাশ .তৃতীয় ফাইলে জুরি বোর্ডের সব মন্তব্য .আর এই মন্ত্যব্য থেকে যে রায় এসেছে -তার ফলা-ফল আছে প্রথম ও দ্বিতীয় ফাইলে .দ্বিতীয় ফাইলে যে রায় এসেছে তা হলো -"দুর্নীতিবাজ খোরশেদ সাহেবকে ফুলের মালা দিয়ে অভিনন্দন ." এবং প্রথম ফাইলের রায় হচ্ছে -"খোরশেদ সাহেবের অপঘাতে মৃত্য.” আর……………………………………(চলবে )
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
তাপসকিরণ রায় যতটুকু পড়লাম,ভালো লাগলো--বাকির অপেক্ষায় থাকলাম.
সূর্য একটা রম্য রম্য ভাব আসলো, তারপর হিসাব নিকাষ আর এখানেই .......চলবে বলে শেষ হয়ে গেল। বাকিটুকুর জন্য অপেক্ষা করব... ভাল লাগা জানালাম
আহমেদ সাবের অসমাপ্ত লেখা। গল্পকার "চলবে" বলে পাদটীকায় জানিয়েছেন। একজন দুর্নীতিবাজ এম,পি কে ধরে এনেছে কয়েকজন যুবক। দেখা যাক, ঘটনা কোন দিকে গড়ায়। লেখার ষ্টাইল বেশ আকর্ষণীয়, একটু রম্য টাইপ।
মিলন বনিক খুব ভালো লাগলো...ডায়ালগগুলো চমৎকার...শেষটাও পড়ার প্রতীক্ষায় থাকলাম.....

০২ সেপ্টেম্বর - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪